Bangla courses
August 7, 2022

মুদ্রাস্ফীতি কী ? মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার ও কেন হয়

মুদ্রাস্ফীতি কী ?

পণ্য ও সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। মুদ্রাস্ফীতি বলতে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায়।তবে সামান্য কয়েকটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যাবে না।সামগ্রিকভাবে দ্রব্যসামগ্রি ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেলে তাকেই মুদ্রাস্ফীতি বলে অভিহিত করা হয়।যেমন বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তেলের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তাকে এককথায় মুদ্রাস্ফীতি বলা যায়।

সংজ্ঞাঃ মুদ্রাস্ফীতি হল একটি অর্থনৈতিক সূচক যা অর্থনীতিতে পণ্য ও সার্ভিসর দাম বৃদ্ধির হার নির্দেশ করে। এটি টাকার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস হওয়াকে নির্দেশ করে। এটি শতাংশ হিসাবে পরিমাপ করা হয় ও পূর্ববর্তী সময়ের থেকে বৃদ্ধি বা হ্রাস নির্দেশ করে। মুদ্রাস্ফীতি উদ্বেগের কারণ হতে পারে কারণ মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে টাকার মূল্য কমতে থাকে।

অন্যভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে সঙ্গায়িত করা যায়।। যেমনঃ মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে তাকেও মুদ্রাস্ফীতি বলে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০১২ সালে চালের দাম ছিলো ২৫ টাকা।কীন্তু এখন ২০২২ সালে এসে সেই চালের দাম হয়েছে ৫০ টাকা।অথাৎ ২০১২ সালে ২৫ টাকায় যে পরিমাণ চাল পাওয়া যেতো এখন ২০২২ সালে এসে ২৫ টাকায় তার থেকে কম চাল পাওয়া যাচ্ছে। তারমানে মুদ্রার মূল্যের অবনতি হয়েছে বা মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যায়।

মুদ্রাস্ফীতি কী

মূল তথ্য

  • মুদ্রাস্ফীতি রেট হল যে হারে পণ্য ও সার্ভিসর দাম বৃদ্ধি পায়।
  • সর্বাধিক ব্যবহৃত মুদ্রাস্ফীতি সূচক হল ভোক্তা মূল্য সূচক এবং পাইকারি মূল্য সূচক।
  • স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিবর্তনের হারের উপর নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতিকে ইতিবাচক বা নেতিবাচকভাবে দেখা যেতে পারে।
  • যাদের বাস্তব সম্পদ রয়েছে, যেমন সম্পত্তি বা মজুদকৃত পণ্য, তারা কিছু মুদ্রাস্ফীতি-তে লাভবান হন কারণ তাদের সম্পদের মূল্য বাড়ে।
  • মুদ্রাস্ফীতি মানে টাকার মূল্য কমে যাবে এবং একই টাকায় আগের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম পণ্য ক্রয় করা যাবে।
  • মুদ্রাস্ফীতি তাদের ক্ষতি করবে যারা নগদ সঞ্চয় করে।

মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার

মুদ্রাস্ফীতির কারণ ও দামস্তর বৃদ্ধির গতিবেগ অনুসারে মুদ্রাস্ফীতিকে নিম্নোক্ত কয়েক শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে –

  • কারণ অনুসারে প্রকারভেদ:
    1. ঋণজনিত মুদ্রাস্ফীতি ( Credit inflation )
    2. মুদ্রাজনিত মুদ্রাস্ফীতি ( Money inflation )
    3. মজুরি ও মুনাফা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি (wage and profit induced inflation )
    4. ঘাটতি ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি ( Deficit – induced inflation ) 
    5. চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ( Demand puli inflation )
    6. ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ( Cost push inflation )  
  • মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা ও দমনমূলক নীতি প্রকারভেদ:
    1. অবাধ মুদ্রাস্ফীতি ( open inflation )
    2. দমিত মুদ্রাস্ফীতি ( Suppressed inflation )
  • দামস্তরের গতিবেগ অনুসারে প্রকারভেদ:
    1. মৃদু মুদ্রাস্ফীতি ( Mild inflation )
    2. উল্লম্ফনশীল মুদ্রাস্ফীতি( Galloping inflation ) 
  • কীনসীয় প্রকারভেদ:
    1. প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি ( Real Inflation )
    2. অর্ধ – মুদ্রাস্ফীতি ( Semi inflation ) 

প্রধান ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কী কী?

তিনটি প্রাথমিক ধরনের মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে: চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি, ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ও অন্তর্নির্মিত মুদ্রাস্ফীতি। যখন মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ মূল্যের কারণ হয়, তখন ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, সুদের হার বৃদ্ধি করে, যা ফলে লাভ ঋণদাতাদের হয়।

মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ কী?

মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।নিচে মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো।

চাহিদা বৃদ্ধিজনিত

যদি একটি দেশে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কীন্তু সেই অনুপাতে উৎপাদন না হয় তখন মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।আমরা জানি কোনো জিনিস খুব অল্প পরিমাণে উৎপাদন হয় এবং তার চাহিদা যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবে ওই দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবে।সরকার আয়কর কমিয়ে দিলে বা কর্মচরীদের বেতন বাড়িয়ে দিলে এবং সুদের হার কমালে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

মূল্যবৃদ্ধিজনিত

যে পণ্যসামগ্রি বা কাঁচামালের ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল তার মূল্যবৃদ্ধি হয় তাহলে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে। যেমন মনে করেন আমাদের দেশে পেট্রোল বা ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেলো। এখন খাদ্যদ্রব্য হোক বা বিলাসবহুল পণ্য হোক সবকিছু ভোক্তার নিকট পৌছাতে যানবাহন ব্যবহার করা হয়।যানবাহন চলতে তো পেট্রোল বা ডিজেল ছাড়া চলতে পারে না।এরফলে অন্যান্য জিনিসের দামও বেড়ে যাবে।

মুদ্রানীতি

অনেক সময় দেশের সরকার নানা কারণে অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়।ফলে বাজারে মুদ্রার আধিক্য দেখা দেয়।কীন্তু সেই অনুপাতে পণ্যের যোগান না বাড়লে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।

রাজস্ব নীতি

সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঋণ নেয় সেই ঋনের অর্থ দেশের মুদ্রাবাজারে যোগ হয় কীন্তু সেই অনুপাতে যদি পণ্যের যোগান না বাড়ে তাহলে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।

মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কোন কোন খাতে বেশি পড়ে?

  • আয়ের ওপর প্রভাবঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে সামান্য পরিমাণে আয় বাড়লেও মূলত আয় বাড়ে না কারণ মুদ্রাস্ফীতির ফলে ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
  • চাহিদা বাড়েঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে চাহিদা বেড়ে যায়।যার ফলে বেশি বেশি পণ্য উৎপাদিত হয়।
  • ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার ওপর প্রভাবঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণগ্রহীতা লাভবান হয় পক্ষান্তরে ঋণদাতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।যেমনঃ করিম রহিমকে ১ বছর আগে ২০০ টাকা ধার দেয়। মনে করুন বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০%।তাহলে র্বতমানে রহিম সেই ২০০ টাকাই দিচ্ছে কীন্তু তার বর্তমান মূল্য ১৮০ টাকা।তাহলে আমরা দেখতে পেলাম ২০০ এখানে লাভবান হচ্ছে কীন্তু করিম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
  • খরচের ওপর প্রভাবঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জিনিসপত্রের দাম বেডে যায়।এমন অবস্থায় সাধারণ জনগন তাদের অপরিহার্য খরচ বাদে অন্যান্য খরচগুলো কমিয়ে দেয়।
  • আমদানি রপ্তানির ওপর প্রভাবঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে দেশে আমদানির পরিমাণ কমে যায় কারণ মুদ্রা মান হ্রাস পাওয়ার কারণে বিদেশী পণ্য কীনতে অনেক বেশি খরচ হয়।পক্ষান্তরে মুদ্রাস্ফীতির ফলে রপ্তানী অনেক বেড়ে যায়।কারণ মুদ্রাস্ফীতির ফলে দেশীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় বিদেশী মুদ্রায় অনেক জিনিস পাওয়া যায়।যার ফলে রপ্তানী অনেক বেড়ে যায়।
  • কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাবঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে সাধারণত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় যার ফলে কোম্পানিগুলো চায় বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করে বেশি মুনাফা অর্জন করতে তাই তারা বেশি বেশি লোক নিয়োগ করে থাকে।যার ফলে সাময়িকসময়ের জন্য কর্মসংস্থান বাড়ে কীন্তু দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থান বাড়ে না।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়

মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত যে কয়টি উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • সুদের হার বাড়িয়ে
  • কর বৃদ্ধি করে
  • খরচ হ্রাস করে

নিম্নে পদ্ধতিগুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হলোঃ

১। সুদের হার বাড়িয়ে

এই পদ্ধতিতে কোনো দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক(বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক) সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।যার ফলে দেশের অন্যান্য ব্যাংকগুলোও তাদের সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।এর ফলে সাধারণ জনগন ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে পারে না।যার ফলে বাজারে যে অতিরিক্ত অর্থ ছিলো তা অতি তা অতি তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২। কর বৃদ্ধি করে

এই পদ্ধতির ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার করের হার বাড়িয়ে দেয়।এত বাজারে থাকা অতিরিক্ত টাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

৩। খরচ কমিয়ে

এই পদ্ধতিতে সরকার বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়্ত্রণের চেষ্টা করে।

শেষকথা

মুদ্রাস্ফীতি একাধারে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুদ্রার মান কমে যায় ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়।ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা বেশি বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়।সর্বোপরি মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।সরকারের উচিত এই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং আমাদের উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া।

আরও পড়ুন

August 18, 2023
উপবৃত্তির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
গণপ্রজাতন্তী বাংলাদেশ সরকার স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করে থাকেন, যারা আর্থিক…
July 7, 2023
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
বিদেশে যেতে বা দেশের মধ্যে কোথাও প্লেনে চলাচল করার জন্য পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই…
May 22, 2023
বাংলাদেশের সকল থানার ওসির নাম ও নাম্বার [Updated 2023]
এখনে বাংলাদেশের সকল বিভাগ ও জেলার সকল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসির সরকারী মোবাইল নাম্বার এর লিস্ট…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram
Share via
Copy link