পণ্য ও সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। মুদ্রাস্ফীতি বলতে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায়।তবে সামান্য কয়েকটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যাবে না।সামগ্রিকভাবে দ্রব্যসামগ্রি ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেলে তাকেই মুদ্রাস্ফীতি বলে অভিহিত করা হয়।যেমন বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তেলের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তাকে এককথায় মুদ্রাস্ফীতি বলা যায়।
সংজ্ঞাঃ মুদ্রাস্ফীতি হল একটি অর্থনৈতিক সূচক যা অর্থনীতিতে পণ্য ও সার্ভিসর দাম বৃদ্ধির হার নির্দেশ করে। এটি টাকার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস হওয়াকে নির্দেশ করে। এটি শতাংশ হিসাবে পরিমাপ করা হয় ও পূর্ববর্তী সময়ের থেকে বৃদ্ধি বা হ্রাস নির্দেশ করে। মুদ্রাস্ফীতি উদ্বেগের কারণ হতে পারে কারণ মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে টাকার মূল্য কমতে থাকে।
অন্যভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে সঙ্গায়িত করা যায়।। যেমনঃ মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে তাকেও মুদ্রাস্ফীতি বলে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০১২ সালে চালের দাম ছিলো ২৫ টাকা।কীন্তু এখন ২০২২ সালে এসে সেই চালের দাম হয়েছে ৫০ টাকা।অথাৎ ২০১২ সালে ২৫ টাকায় যে পরিমাণ চাল পাওয়া যেতো এখন ২০২২ সালে এসে ২৫ টাকায় তার থেকে কম চাল পাওয়া যাচ্ছে। তারমানে মুদ্রার মূল্যের অবনতি হয়েছে বা মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যায়।
মূল তথ্য
মুদ্রাস্ফীতির কারণ ও দামস্তর বৃদ্ধির গতিবেগ অনুসারে মুদ্রাস্ফীতিকে নিম্নোক্ত কয়েক শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে -
প্রধান ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কী কী?
তিনটি প্রাথমিক ধরনের মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে: চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি, ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ও অন্তর্নির্মিত মুদ্রাস্ফীতি। যখন মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ মূল্যের কারণ হয়, তখন ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, সুদের হার বৃদ্ধি করে, যা ফলে লাভ ঋণদাতাদের হয়।
মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।নিচে মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো।
যদি একটি দেশে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কীন্তু সেই অনুপাতে উৎপাদন না হয় তখন মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।আমরা জানি কোনো জিনিস খুব অল্প পরিমাণে উৎপাদন হয় এবং তার চাহিদা যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবে ওই দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবে।সরকার আয়কর কমিয়ে দিলে বা কর্মচরীদের বেতন বাড়িয়ে দিলে এবং সুদের হার কমালে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
যে পণ্যসামগ্রি বা কাঁচামালের ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল তার মূল্যবৃদ্ধি হয় তাহলে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে। যেমন মনে করেন আমাদের দেশে পেট্রোল বা ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেলো। এখন খাদ্যদ্রব্য হোক বা বিলাসবহুল পণ্য হোক সবকিছু ভোক্তার নিকট পৌছাতে যানবাহন ব্যবহার করা হয়।যানবাহন চলতে তো পেট্রোল বা ডিজেল ছাড়া চলতে পারে না।এরফলে অন্যান্য জিনিসের দামও বেড়ে যাবে।
অনেক সময় দেশের সরকার নানা কারণে অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়।ফলে বাজারে মুদ্রার আধিক্য দেখা দেয়।কীন্তু সেই অনুপাতে পণ্যের যোগান না বাড়লে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঋণ নেয় সেই ঋনের অর্থ দেশের মুদ্রাবাজারে যোগ হয় কীন্তু সেই অনুপাতে যদি পণ্যের যোগান না বাড়ে তাহলে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।
মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত যে কয়টি উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
নিম্নে পদ্ধতিগুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হলোঃ
এই পদ্ধতিতে কোনো দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক(বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক) সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।যার ফলে দেশের অন্যান্য ব্যাংকগুলোও তাদের সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।এর ফলে সাধারণ জনগন ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে পারে না।যার ফলে বাজারে যে অতিরিক্ত অর্থ ছিলো তা অতি তা অতি তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এই পদ্ধতির ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার করের হার বাড়িয়ে দেয়।এত বাজারে থাকা অতিরিক্ত টাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
এই পদ্ধতিতে সরকার বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়্ত্রণের চেষ্টা করে।
মুদ্রাস্ফীতি একাধারে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুদ্রার মান কমে যায় ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়।ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা বেশি বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়।সর্বোপরি মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।সরকারের উচিত এই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং আমাদের উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া।