বর্তমানে যে সব প্রজাতির মাশরুম বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় সে গুলো হলো-গুটি বা বাটন মাশরুম, ঋষি মাশরুম, মিল্ক হোয়াইট মাশরুম, স্ট্র মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম।
এটি এক ধরনের ছত্রাক ও খুবই সুস্বাদু একটি খাবার। মাশরুম অনেক ধরনের থাকলে ও সব ধরনের জাতের মাশরুম খাওয়া যায় না।
পৃথিবীতে প্রায় তিন লক্ষ প্রজাতির মাশরুম থাকলেও এর মধ্যে প্রায় দুই লক্ষ নব্বই হাজার প্রজাতির খাওয়ার অনুপোযোগী। গবেষনা করে দেখা গেছে তিন লক্ষ প্রজাতির মাশরুমের মধ্যে মাএ দশ হাজার প্রজাতি খাওয়ার উপযোগী।
মাশরুমের ব্যবসা অনেক লাভজনক হওয়ায় অনেকে ক্ষুদ্র ও ব্যাপক আকারে এর চাষ করছে। স্পন হতে মাশরুম চাষ করা যায় আর স্পন ল্যাবটারিতে তৈরি করা হয়।
লাভজনক কৃষি চাষাবাদ ব্যবসা করার জন্য প্রথমে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মাশরুম চাষ করার জন্য হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এক্ষেত্রে একা না পারলে কিছু লোক একত্রে মিলেমিশে মাশরুম চাষ করেও সফলতা পেতে পারেন।
মাশরুম চাষ শুরু করার জন্য কতো টাকা প্রয়োজন
প্রাথমিকভাবে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা মূলধন নিয়ে প্রাথমিকভাবে শুরু করা যায়।মাশরুম চাষ করে বেকাররা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
কোথায় মাশরুম চাষ করা যায়
বাংলাদেশ তার মাশরুম চাষের হার বৃদ্ধিতে ব্যাপক অগ্রগতি করছে। বাড়িতে চাষাবাদ, বিশেষ করে, জনপ্রিয়তার বাড়ছে। বাড়িতে মাশরুম চাষ তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সাশ্রয়ী, এবং বাংলাদেশের অনেক পরিবার তাদের খাদ্য ও আয়ের পরিপূরক হিসেবে এটি গ্রহণ করছে।
কারা মাশরুম চাষাবাদ করতে পারেন
পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা ঘরে বসে মাশরুম চাষ করে স্বাভলম্বী হতে পারে।মাশরুম চাষের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু দিক লক্ষ্য করতে হবে যেমন-আলোহীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দরকার,পর্যাপ্ত অক্সিজেন চলাচল করতে পারে এমন স্থান মাশরুম চাষ করার জন্য নির্বাচন করতে হবে।
তবে গ্রাম ও শহরের উভয় স্থানের মানুষ মাশরুম চাষ করতে পারবেন। ছোট ছোট মাচা ব্যবহার করতে হবে স্পন গুলো রাখার জন্য।মাচা বাঁশ,লোহা এবং কাঠ দিয়েও তৈরি করা যাবে।
কোথায় মাশরুম চাষ করা যাবে
অতিরিক্ত গরম স্থান মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী নয়। মাশরুম চাষ করার জন্য অনেক পানির প্রয়োজন হয়।স্পনগুলোতে নিয়মিত পানি স্প্রে করে স্যাঁতসেতে রাখতে হবে।
মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ
সফল চাষ নিশ্চিত করতে বাড়ির পরিবেশে সঠিক পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে এবং বিশেষ কিট, স্পোর সিরিঞ্জ এবং প্রেসার কুকার ব্যবহার মাশরুম চাষে জড়িত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক জ্ঞান এবং সরঞ্জাম সহ, মাশরুম চাষ যে কারো জন্য একটি ফলপ্রসূ এবং টেকসই কার্যকলাপ হতে পারে।
বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মাশরুম চাষের প্রক্রিয়াটি কঠিন নয় এবং খুব কম জায়গা প্রয়োজন। বাড়িতে সফল মাশরুম চাষের চাবিকাঠি হল সঠিক ধরনের মাশরুম নির্বাচন করা, প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রাপ্ত করা এবং নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করা।
উপকরণ
মাশরুমের ধরণের উপর নির্ভর করে, অভ্যন্তরীণ চাষ, বহিরঙ্গন চাষ এবং ব্যাগ বা কিট ব্যবহার সহ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি উপলব্ধ রয়েছে।
এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে, যে কেউ বাড়িতে সফলভাবে মাশরুম চাষ করতে পারে।
মাশরুম বীজ রোপণ পদ্ধতি
চাষের জন্য প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি এমনভাবে ঝরিয়ে নেবেন, যাতে হাত দিয়ে খড় চাপলে পানি না পড়ে অথচ হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে।
যারা মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য প্রচুর সম্পদ রয়েছে। এগুলি অনলাইন কোর্স, ভিডিও এবং বই থেকে শুরু করে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে অনুষ্ঠিত মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কোর্স পর্যন্ত।
অনেক মাশরুম চাষীরা বাড়িতে কীভাবে মাশরুম জন্মাতে হয় তা লোকেদের শেখানোর জন্য কর্মশালার আয়োজন করেন।
মাশরুম চাষের পরে মাশরুমের বিপণন করা গুরুত্বপূর্ণ।মাশরুম সঠিকভাবে বিপণন করতে পারলে অনেক লাভ করা সম্ভব। তাই মাশরুম চাষ করার সাথে মাশরুম বিপণন বা মার্কেটিং করার পদ্ধতিও ভালোভাবে জানতে হবে।মাশরুম কোথায় কোথায় বিক্রি করা যায় তা জানতে হবে।
বড় বড় দোকানে, বাজারে মাশরুম বিক্রি করলে অনেক লাভবান হওয়া যায় ।এছাড়া খোলা বাজারে নিজ উদ্যেগে মাশরুম বিক্রি করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়।সাধারণত বাজারে মাশরুম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
যদি মাশরুম কোনো কারণে বিক্রি করতে না পারেন সেক্ষেত্রে মাশরুম শুকিয়ে রেখে সংরক্ষন করতে পারবেন।মাশরুম শুকিয়ে রাখা কে ড্রাই মাশরুম বলে। পরবর্তীতে ড্রাই মাশরুম বাজারে এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার দুই শত টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
ড্রাই মাশরুম পানিতে ভিজানোর ফলে কাঁচা মাশরুম এর মতো অনেকটা হয়ে যায়।কাঁচা মাশরুম বিক্রি করতে না পারলে মাশরুম শুকিয়ে ও রাখা যায় এই কারণে মাশরুম নষ্ট না হওয়ায় মাশরুম লাভজনক ব্যবসা।
আপনার চাষ করা মাশরুম কোনো ভালো জায়গায় বিক্রি করার জন্য দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে। একটি হলো মাশরুমের ভালো মান এবং অন্যটি হলো মাশরুমের উৎপাদনের পরিমাণ।আপনার চাষ করা মাশরুম এর যদি ভালো মানের হয় ভালো দাম পাবেন।
বাংলাদেশের অনেক এলাকায়ই বর্তমানে মাশরুম চাষ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহীসহ সারাদেশেই বর্তমানে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে।
ঢাকা শহরে বিভিন্ন এলাকায় যেমন গোড়ান, কোর্ট কাচারি এলাকা, রামপুরা, বনশ্রী, সাভার, টঙ্গীতে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করছে।
মাশরুম চাষ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষন তাই মাশরুম চাষ এবং প্রশিক্ষণ ভালো ভাবে দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে যারা আগ্রহী তাদের আগে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তিন দিন এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তাছাড়া প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারি সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়।এই প্রশিক্ষণে শেখানো হয় কিভাবে মাশরুম চাষ করবে,কিভাবে বিপণন করা যায়, মাশরুম চাষের সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি বিষয় গুলোর ভালো ভাবে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। সরকারি প্রশিক্ষন ছাড়াও বেসরকারিভাবে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
মাশরুম চাষ বর্তমানে অনেক লাভ জনক। এটি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সম্ভাবনাময় দিক।মাশরুম চাষ অন্যতম সাফল্যমন্ডিত হবে আরো সরকারি সহায়তা পেলে।মাশরুম চাষের মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার মানুষের আত্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি সহায়তা অনেক পেলে মাশরুম চাষে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
পরিশেষে,
উপরে উল্লেখিত বর্ণনায় মাশরুম চাষ সর্ম্পকে আলোচনা করেছি।মাশরুম চাষ করতে কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হবে সে সর্ম্পকে বলা হয়েছে।আশাকরি মাশরুম চাষ সর্ম্পকে বুঝতে পারছেন।