কতৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোন বিষয়ে আবেদন জানিয়ে যে পত্র বা দরখস্ত লেখা হয় তাকে আবেদন পত্র বলে। একটি চাকরিতে আবেদন করা কঠিন কাজ মনেহতে পারে। আপনাকে শুধুমাত্র আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হবে না, তবে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার আবেদন প্রাথমিক স্ক্রীনিং প্রক্রিয়াটি পাস করেছে।
একটি চাকরির আবেদনপত্র (Job Application) সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সাথে আপনার পরিচিতি হিসাবে কাজ করে। এই কারণেই চাকরির আবেদনপত্র লেখার জন্য সঠিক নিয়ম এবং নির্দেশিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং আপনার নিজের চাকরির সন্ধান শুরু করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য নমুনা প্রদান করব।
চাকরির ঘোষণাটি (Job Circular) মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি পদের জন্য সমস্ত যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছেন।
মনে রাখবেন যে সরকারি চাকরির আবেদনপত্রের জন্য আপনাকে একটি সাধারণ চাকরির আবেদনের চেয়ে আরও বেশি তথ্য জমা দিতে হতে পারে, যেমন নাগরিকত্বের অবস্থা, অভিজ্ঞ অবস্থা এবং আপনার কাছে থাকা যেকোনো নিরাপত্তা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স।
চাকরির পাবার জন্য আবেদন পত্র লেখার সময় যে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১. ভাষাগত দক্ষতার কোন বিকল্প নেই
আবেদন পত্র লেখার সময় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভাষার ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেনো শব্দ অস্পষ্ট বা অর্থহীন না থাকে।
২. দরখাস্তের শুরুতে তারিখ দিন
আবেদন পত্রের প্রথমে বামদিকে তারিখ লিখতে হবে। উল্লেখিত দুই ফর্মেটেই লেখা যেতে পারে।
৩. যথাযত সম্বোধন করুন
তারিখের পরে বরাবর লিখতে হবে প্রারম্ভিক শব্দ হিসেবে। সম্মান, শ্রদ্ধা, অর্থ বুঝানো হয়ে থাকে যা আবেদন পত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখে। আবেদনের এই অংশে প্রাপক অর্থাৎ যার কাছে এই আবেদনপত্রটি প্রেরন করবেন তার নাম, পদবি এবং ঠিকানা উল্লেখ থাকে।
৪. আবেদন এর বিষয় লিখুন
প্রাপকের যাবতীয় তথ্য লেখা শেষে চাকরির জন্য প্রার্থিত পদের নামকে বিষয়ে হিসাবে উল্লেখ করতে হবে।
৫. ফরর্মাল ভাবে বিস্তারিত লিখুন
বরাবরের পর জনাব মহোদয় লিখে হবে, এর পরে চাকরির বিজ্ঞপ্তির বিশ্বস্ত সূত্র এবং তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
৬. আবেদনকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিখুন
আবেদন লেখার এই পর্যায়ে আবেদনকারীর ব্যাক্তিগত সকল তথ্য এবং কাজের অভিজ্ঞতা সকল তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
যে সকল তথ্য দরকার তা ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও যদি কোন অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আবেদন পত্রে তা উল্লেখ করতে পারেন।
অতিরিক্ত যোগ্যতার অন্যতম একটি হল আইসিটি বা কম্পিউটার বিষয়ে কতটা পারদর্শী। বর্তমান সময়ে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বিশেষ অভিজ্ঞক্তা হিসাবে গণ্য করা হয়।
৭. ছবি, ও প্রমানাদি
সবশেষে চাকরির আবেদনপত্রে উল্লেখিত তথ্যের প্রমাণাদি হিসাবে সকল পরিক্ষার জরুরী কাগজ পত্র, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি গেজেটেড কর্মকর্তার দ্বারা সত্যাহিত চারিত্রিক সনদপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
চলুন তাহলে নমুনার মাধ্যমে দেখে নিই চাকরির জন্য আবেদন পত্রটি কেমন হতে পারে।
তারিখঃ০৩-০৯-২০২৪ ইং
বরাবর,
অধক্ষ মহোদয়
প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা।
বিষয়ঃ যে বিষয়ের জন্য আবেদন করবেন তা। (যেমনঃ সরকারী প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক পদে চাকুরির জন্য আবেদন পত্র)
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, গত …………………… (তারিখ),............ (চাকরির খবরের সোর্সের নাম) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার অধীনে ............ পদে কিছু লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমার জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আপনার সদয় বিবেচনার জন্য নিচে উপস্থাপন করছি।
যোগাযোগের ঠিকানা
পরীক্ষা | বিষয় / বিভাগ | সাল | গ্রেড পয়েন্ট | বোর্ড / পতিষ্ঠান |
এস এস সি | বিজ্ঞান | ২০১০ | ৫.০০ | ঢাকা |
এইস এস সি | মানবিক | ২০১২ | ৫.০০ | ঢাকা |
স্নাতক | ইতিহাস | ২০১৭ | ৩.৭৫ | বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় |
স্নানাকোত্তর | ইতিহাস | ২০১৯ | ৩.৬৭ | বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় |
অভিজ্ঞতাঃ
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন এই যে, উপরোক্ত তথ্যাবলির প্রেক্ষিতে অনুগ্রহপূর্বক আমাকে ........... পদের জন্য বিবেচনা করলে বাধিত হবো।
নিবেদক,
একান্ত অনুগত নিয়োগ প্রার্থী
আবির শেখ
সংযুক্তি
যদিও চাকরির আবেদনপত্র এবং সিভি উভয়ই একটি চাকরি পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি, তবে তারা একই নয়।
একটি চাকরির আবেদনপত্র একটি আনুষ্ঠানিক নথি যা আপনাকে একজন সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যেখানে একটি সিভি হল আপনার শিক্ষা, কাজের ইতিহাস, দক্ষতা এবং কৃতিত্বের একটি বিস্তৃত সারসংক্ষেপ।
চাকরির আবেদনপত্রটি আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন তা লক্ষ্য করা উচিত এবং আপনার শক্তি এবং যোগ্যতাগুলি হাইলাইট করা উচিত যা আপনাকে এই অবস্থানের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
অন্যদিকে, একটি সিভিতে আপনার শিক্ষা এবং কাজের ইতিহাস সহ, সেইসাথে আপনার কাছে থাকা যেকোনো প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বা যোগ্যতা সহ আপনার কর্মজীবনের একটি বিশদ বিবরণ দেওয়া উচিত।
চাকরির আবেদনের সাথে জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করাকে আবেদন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিয়োগকর্তারা প্রার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, দক্ষতা এবং কৃতিত্বের একটি ফরম্যাটেড পদ্ধতিতে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ রাখতে পছন্দ করেন যা পদের জন্য প্রার্থীর উপযুক্ততা নির্ধারণের জন্য সহজেই স্কিম করা যেতে পারে।
একটি জীবনবৃত্তান্ত একজন নিয়োগকর্তা যে মূল তথ্য খুঁজছেন তা হাইলাইট করে এবং প্রার্থীর পেশাদার ইতিহাসের একটি স্ন্যাপশট প্রদান করে।
চাকরিপ্রার্থীদের নিশ্চিত করা উচিত যে তাদের জীবনবৃত্তান্তে প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড রয়েছে এবং একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য সহজে পড়া ফন্ট, লেআউট এবং ফর্ম্যাট ব্যবহার করা উচিত।
একটি চাকরির আবেদনের সাথে একটি জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করার মাধ্যমে, চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হলে এভাবে লিখতে হবে।
আমাদের স্কুল জীনবসহ সকল ক্ষেত্রে আবেদন লেখার দরকার হয়। আবেদন পত্র লেখার বিষয়টি আনেক বিষয় ভিত্তিক হতে পারে।
চাকরির আবেদনপত্র লেখার সময়, আপনি একটি স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং সুনিপুণ নথি উপস্থাপন করেন যা সম্ভাব্য নিয়োগকারীদের প্রভাবিত করবে।
আর আপনি যদি আবেদন পত্রটি নিজে থেকে লিখতে পারেন তাহলে আপনাকে অন্য কারো কাছে যেতে হবে না আবেদন পত্র লিখার জন্য। আপনি নিজে থেকে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন পত্র লিখতে পারবেন।