টেলিমেডিসিন কি ? বাংলাদেশে টেলিমেডিসিন সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত
টেলিমেডিসিন (Telemedicine) হল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাস্থ্য সেবা গ্রহণ ও প্রদান করার প্রক্রিয়া। যেখানে ডাক্তার বা রুগী ইন্টারনেট বা ফোন কলের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদান করে।
আমাদের প্রযুক্তির বিস্তার দ্রুত ঘটছে। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি দিক পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এমনকি আমাদের স্বাস্থ্য সেবা সিস্টেমও প্রভাবিত হচ্ছে। একটি বিশেষ ধরনের ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবার নাম টেলিমেডিসিন। কিন্তু টেলিমেডিসিন কি?
কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যামে দূর-দুরন্ত থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করাকে টেলিমেডিসিন (Telemedicine) সেবা বলে।
এর মাধ্যমে যেকেউ কোনো ডাক্তারের চেম্বার বা অফিসে বা হাসপাতালে ভিজিট না করে ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করতে পারবেন।
চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
রোগীরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে টেলিমেডিসিন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে।
টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা কি
টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীদের দূরবর্তী রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা।
টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সংক্ষেপে বললে “টেলিমিডিসিন স্বাস্থসেবা পরিসেবার ডিজিটাল প্রক্রিয়া। যেখানে একজন রুগী মোবাইল অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে ডাক্তারের কাছ থেকে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহন করতে পারেন।
অর্থাৎ, টেলিমেডিসিন বলতে বোঝায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান। এটি স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবা দাতার ও রোগীর মধ্যে দূরবর্তী সম্পর্ক গঠন করে।
যেখানে যেকেউ-
প্রযুক্তি (মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব এপ্লকেশন ) ব্যবহার করে ডাক্তার ও রুগী চিকিৎসা সেবা আদান প্রদান করতে পারে।
রুগী বিভিন্ন প্রকার ইমেজ, টেস্ট রিপোর্ট, ফাইল বা আগের চিকিৎসার কাগজ ডাক্তারকে দেখতে পারেন।
ডাক্তারের সাথে চ্যাট করতে পারেন।
ডাক্তার ই- প্রেসক্রিপশন প্রদান করতে পারেন।
ওষুধ সেবনের সময় সেট ও রিমাইন্ডার দিতে পারে।
পরবর্তী ভিজিট এর তারিখ ও সময় শিডিউল করতে পারেন।
টেলিমেডিসিন এর প্রধান বৈশিষ্ট সমুহ
চিকিৎসা পরামর্শ -দূরবর্তী রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করে।
চিকিৎসার সমন্বয় - চিকিৎসার সমন্বয় প্রদান করে, যা রোগীদের জীবন সহজ করে।
চিকিৎসা পরিকল্পনা - চিকিৎসার সুবিধা এবং পরিকল্পনা নির্ধারণে সহায়তা করে।
টেলিমেডিসিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
ডিজিটাল প্লাটফর্ম: টেলিমেডিসিন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে।
দূরবর্তী সেবা: চিকিৎসার সেবা প্রাপ্তি এবং পরামর্শ নেওয়ার জন্য রোগীর শারীরিক উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না।
সময় ও খরচ বাচানো: রোগীরা চিকিৎসালয়ে যেতে হয় না, যা তাদের সময় ও খরচ বাচায়।
টেলিমেডিসিনের উদ্ভাবন ও বিকাশ
টেলিমেডিসিনের বিকাশ হয়েছে আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে। এটি বিশেষ করে এমন অঞ্চলের জন্য উপযোগী যেখানে চিকিৎসার সুবিধা প্রাপ্য নয়।
চ্যালেঞ্জ
এখনো টেলিমেডিসিনের প্রয়োগে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জঃ প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হলো টেলিমেডিসিন প্রয়োগের একটি প্রধান বাধা। যেমন: দ্রুত গতির ইন্টারনেট ও মোবাইল অ্যাপ ইন্সটল ও ব্যবহার ইত্যাদি।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাঃ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা টেলিমেডিসিনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকারি নীতি ও নির্দেশনাঃ সরকারি নীতি ও নির্দেশনা টেলিমেডিসিনের প্রয়োগে প্রভাব ফেলে।
টেলিমেডিসিন এর সুবিধা
ঘরে বসেই সেবা পাওয়া যায় ডাক্তারের চেম্বার বা হাসপাতালে না গিয়ে।
কম খরচে এবং দ্রুত সময়ে সেবা পাওয়া যায়।
কম অভিজ্ঞ ডাক্তার বেশি অভিজ্ঞ ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিতে পারে।
বাংলাদেশে টেলিমেডিসিনের অবস্থা
বাংলাদেশে টেলিমেডিসিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুস্থ্য সেবা বিস্তারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
বাংলাদেশে টেলিমেডিসিনের প্রয়োগ সম্প্রতি বেড়েছে। টেলিমেডিসিন বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে টেলিমেডিসিনের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
রোগীরা এখন ঘরে বসে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে পরামর্শ নিতে পারেন। বিভিন্ন অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
যদিও টেলিমেডিসিনের অনেক সুবিধা আছে, তবে এতে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তির জ্ঞান এর অভাব, ডাটা সুরক্ষার মানুষজন খুব একটা জ্ঞান রাখেন না, প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব ইত্যাদি মূল চ্যালেঞ্জগুলি।
এছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো টেলিমেডিসিন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সুতরাং এখানে সাবধান হওয়া জরুরি।
সরকারী ভাবে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন ১৬২৬৩ তে কল করুন দিন রাত ২৪ ঘন্টা। (বিস্তারিত)
টেলিমেডিসিন কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হয়
বিভিন্ন ভাবে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি সাধারণ ভিডিও বা অডিও কলের মতোই পরিচালিত হয়। HIPAA অনুগত কনফারেন্স টুলের প্রয়োজন হয় বেশিরভাগ দেশে।
ইন্টারএক্টিভ মেডিসিন - HIPAA সম্মতি বজায় রেখে রোগী এবং চিকিৎসকদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করে।
ডাটা স্টোর এবং ফরওয়ার্ড - যা প্রদানকারীদের অন্য অবস্থানে একজন অনুশীলনকারীর সাথে রোগীর তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দেয়।
রিমোট পেশেন্ট মনিটারিং - যা দূরবর্তী চিকিৎসকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কম্পিউটার বা মোবাইল মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করে বাড়িতে থাকা রোগীদের নিরীক্ষণ করতে দেয়।
পরিশেষে, উপরে উল্লেখিত বর্ণনায় টেলিমেডিসিন কি, টেলিমেডিসিন কিভাবে পরিচালিত হয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি এই বিষয়টি পড়ে উপকৃত হবেন। এত সময়ে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।