ডেস্কটপ কম্পিউটারের সিপিইউ কেস ও মনিটর রাখার জন্য টেবিলের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কেউ বাসার সাধারণ টেবিল ব্যবহার করে, কেউ বিশেষভাবে বানানো কম্পিউটার টেবিল ব্যবহার করে। অনেকে বাসায় সাধারণ টেবিল থাকার কারণে আলাদা করে কম্পিউটার টেবিল কিনতে চায়না। অথচ কম্পিউটার টেবিলের বিশেষ কিছু সুবিধা আছে যা সাধারণ টেবিলে পাওয়া যায় না। তাই আজকের পোস্টে কম্পিউটার টেবিলে কি কি উপকারিতা পাবেন সেসব বিস্তারিত বলা হবে।
সঠিক ও নিরাপদভাবে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ রাখার জন্য কম্পিউটার টেবিল ডিজাইন করা হয়। কম্পিউটার টেবিলে সিপিউ, মনিটর, কীবোর্ড, মাউস, স্পিকার ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা কম্পার্টমেন্ট থাকে। এতে সবকিছু সহজে এক্সেস করা যায় এবং সাধারণ টেবিলের চেয়ে কম ধুলো-ময়লা জমা হয়। এছাড়া কম্পিউটার টেবিলের মাধ্যমে খুব সহজে অগোছালো বৈদ্যুতিক তার গুছিয়ে রাখা যায়।
কম্পিউটার টেবিলে সবকিছু রাখার জন্য আলাদা জায়গা থাকে। টেবিলের নিচে সিপিউই রাখা যায় বলে উপরের পুরো টেবিল ফাঁকা থাকে। টেবিলের উপরে মনিটরের পাশাপাশি নিজের বই, খাতা, কলম, ঘড়ি ইত্যাদি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। কীবোর্ড ও মাউস রাখার জন্য এক প্রকার ড্রয়ার থাকে যা বাইরে থেকে দেখা যায়না। টেবিলের নিচের পৃষ্ঠে যাবতীয় তার পেঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়, তাই টেবিল খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার একটি হলো কম্পিউটার টেবিলে মনিটর থেকে সঠিক দূরত্বে বসা যায়। কম্পিউটার টেবিলগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে টেবিলের উচ্চতা চোখের সমান্তরাল থাকে। তাই খুব বেশি মাথা বা ঘাড় ঘুরিয়ে মনিটর দেখার প্রয়োজন হয় না। এতে দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করলেও ঘাড়ে ব্যাথা সৃষ্টি হবে না। এছাড়া চেয়ারের দূরত্ব সঠিক থাকার কারণে চোখের সমস্যা কম হয়।
কম্পিউটার টেবিলে একাধিক ড্রয়ার, শেলফ ও কেবিনেট থাকতে পারে। তাই নিজের দরকারি সবকিছু জায়গামত রাখা যায়। টেবিলের ড্রয়ার লক করে রাখার ব্যবস্থা থাকে, তাই যেকোনো দামী জিনিস সবার চোখের আড়ালে নিরাপদে রাখা যায়। কিছু কম্পিউটার টেবিলে বই রাখার শেলফ থাকায় পড়াশোনার কাজে বেশ সহায়ক হয়।
আগে কম্পিউটার টেবিল স্টেশনারি রাখার মত ডিজাইন করা হতো। কিন্তু এখনকার টেবিলগুলোর নিচে চাকা লাগানো থাকে। তাই সহজে রুমের বিভিন্ন প্রান্তে নেওয়া যায়। অনেকে এক রুম থেকে আরেক রুমে জিনিস আনা নেওয়ার কাজেও টেবিলগুলো ব্যবহার করে।
সাধারণ টেবিলের নিচে সিপিইউ রাখার পর পা রাখতে সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন এভাবে ব্যবহার করে একসময় নানারকম শারীরিক সমস্যার তৈরি হবে। কিন্তু কম্পিউটিার টেবিলে পা রাখার জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকে। তাই আরামে বসে কাজ করা যায়। কিছু টেবিলে পায়ের নিচে নরম জিনিস রাখার জন্য অতিরিক্ত জায়গা দেওয়া হয়।
আপনি রুম সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করলে কম্পিউটার টেবিল আপনার জন্য ভালো চয়েস। এই টেবিলগুলো আধুনিক ডিজাইনের হয়ে থাকে, তাই দেখতে খুব সুন্দর ও মডার্ন মনে হয়। চাইলে রুমের অন্য ফার্নিচারের সাথে মিল করে কোনো ডিজাইন নিতে পারেন। এতে রুমের সবকিছু এক সেট মনে হবে। যারা গেমিং বা মিউজিক স্ট্রিমিং করে, তারা ওয়াইড ক্যামেরাতে নিজের কম্পিউটার ডেস্ক দেখাতে পারে।
অফিসে ছোটখাট কাজে বারবার ওঠাবসা করে সময় নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে কম্পিউটার টেবিলে সব জিনিস ও কাগজপত্র এক স্থানে রাখতে পারবেন। এতে যেকোনো তথ্য উপাত্ত সহজে ফাইলের পেপার থেকে কম্পিউটারে স্প্রিডশীটে উঠানো যায়। আবার কম্পিউটার টেবিলে চায়ের কাপ, পানির বোতল, টেবিল টপ ক্যালেন্ডার, ঘড়ি, ফুলের টব ইত্যাদি রাখার নির্দিষ্ট জায়গা থাকে।
বিদেশের মত বাংলাদেশেও ফার্নিচারসহ বাসা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বাসায় কম্পিউটার টেবিল থাকলে অন্য কেউ সহজে বাসা পছন্দ করবে, কারণ তার আর আলাদা সময় নষ্ট করে টেবিল কিনতে হবে না। আবার আপনি চাইলে ব্যবহৃত কম্পিউটার টেবিলও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন। কম্পিউটার টেবিল পরিষ্কার রাখা সহজ বলে ভাল দামে দ্বিতীয়বার বিক্রি করা যায়।
কম্পিউটারে সারাদিন বসে কাজ করার ফলে শরীর খারাপ হতে পারে। অনেকসময় মেরুদন্ডে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়। তাই অ্যাডজাস্ট করা যায় এরকম চেয়ার ও টেবিল কিনতে সবাই পছন্দ করে। রিভলভিং কম্পিউটার টেবিলগুলো নিজের সুবিধামত ভাজ করে নেওয়া যায়। এছাড়া কিছু স্ট্যান্ডিং টেবিল আছে, যার উচ্চতা কমবেশি করে দাড়িয়েও কাজ করা যায়।
সবশেষ কথা হলো কোথায় ভাল কম্পিউটার টেবিল পাবে? আপনার কাছাকাছি থাকা ব্রান্ডেড ফার্নিচার শপগুলোতে সবরকম কম্পিউটার টেবিল পাবেন। এছাড়া গুগলে “computer price in bangladesh” লিখে সার্চ করলে কাছাকাছি সেরা টেবিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এর ওয়েবসাইট ও স্টোরের লোকেশন পেয়ে যাবেন। অনলাইনে কিনলে অবশ্যই ওয়ারেন্টি পলিসি, ডেলিভারি মেথড ও টেবিলের গুণগত মান যাচাই করে কিনবেন। তাহলে বারবার কম্পিউটার টেবিল কেনার মত সমস্যা তৈরি হবে না।