মধু আল্লাহর দেওয়া প্রদত্ত নেয়ামত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান। মধু হলো এক প্রকার ঘন ও মিষ্টি তরল পদার্থ। মধু হলো হাজার হাজার মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের নির্যাস সংগ্রহ করে তাদের পাকস্থলিতে রাখে।
এরপর তাদের মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মধু তৈরি হয়। এরপর সেই মধু তারা মৌচাকে আহরণ করে রাখে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণসম্পন্ন একটি তরল পদার্থ।
আরবিতে মৌমাছিকে বলা হয় নাহল(আরবি: سورة النحل)। পবিত্র কোরআনে এই নামে একটি সূরা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘’তার পেট থেকে বিভিন্ন রংয়ের পানীয় নির্গত হয়।যাতে মানুষের জন্য রয়েছে প্রতিকার ‘’(সূরা নাহল,৬৯)।
মধু হচ্ছে খাদ্য এবং ঔষধ উভয়ই। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,” জান্নাতে স্বচ্ছ পানির নহর প্রবাহিত হবে”(সূরা মুহাম্মদ,১৫)। মধুর আরেকটি বৈশিষ্ট হলো মধু নষ্ট হয় না এবং অন্য বস্তুকেও নষ্ট হতে দেয় না।
মধুর রোগ সারানোর শক্তি অনেক বেশি। কিছু কিছু চিকিৎসক আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে মধু সর্ব রোগের ঔষধ। তারা ফোঁড় থেকে শুরু করে চেখের চিকিৎসায়ও মধু ব্যবহার করেন।
হযরত ওমর(রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে তিনি তার শরীরে ফোঁড়া হলেও মধু ব্যবহার করতেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন. ”আল্লাহ তায়ালা কি কোরআনে বলেননি যে, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার”।(কুরতুবী)
হাদিস শরীফে মধু সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সাঃ) এর মতে- মধু হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন যে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সকালে
মধু চেটে খায় তার কোন বড় বিপদ হতে পারে না।”(ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)
স্বয়ং, রাসূলুল্লাহ (সা.) সকাল বেলা খালি পেটে মধুর শরবত পান করতেন।
মধুর পুস্টিগুণ
মধু ৪৫ টিরও বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ
১. গ্লুক্লোজ
২. ফ্রুক্টোজ
৩. সুক্রোজ
৪. মল্টোজ
৫. খনিজ লবণ
৬. ভিটামিন বি ১
৭. ভিটামিন বি ২
৮. ভিটামিন বি ৩
৯. ভিটামিন বি ৫
১০. ভিটামিন বি ৬
১১. আ্যমাইনো এসিড
১২. এনকাইম
১৩. আয়োডিন
১৪. আ্যন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান
১৫. আ্যন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান
১৬. জিংক
১৭. কপার
মধু ভেষজ উপাদানের সাথে মিশিয়ে রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে কয়েকটি রোগ নিরাময়ে মধুর ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ
সর্দি কাশি
চায়ের সাথে মধু ও আদার রস খেলে সর্দি ও শ্লেষ্মা দূর হয়।
খাওয়ার নিয়মঃ- মধু ১ চামচ+ আদার রস ১ চা চামচ
স্বরভঙ্গ
খাঁটি মধুর সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে গড়গড়া করলে গায়কদের স্বর বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে এটা টনিকের মতো কাজ করে।
আমাশয়ের চিকিৎসায় মধু
রক্ত মিশ্রিত পায়খানা, তৈলাক্ত পায়খানা এবং সঙ্গে পেট কামড়ালে তাকে আমাশয় বলে। মধু দিয়ে কিভাবে আমাশয় রোগের চিকিৎসা করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
ডায়রিয়ার চিকিৎসায় মধু
ডায়রিয়া হলে রাসুল(সঃ) মধু খাওয়ানোর কথা বলেছেন।
জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ই কচ বলেছেন, "উপযুক্ত পরিমাণ ঘাস খেলে ঘোড়া যেমন তেজী হয় তেমনি নিয়মিত সকালে ১ চা চামচ করে খাঁটি মধু খেলে হৃদপিন্ড শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া মধু আয়ুও বৃদ্ধি করে।"
মধু শুধু রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় না। এর আরো উপকারিতা আছে। এখন আমরা সেগুলো জানবোঃ
মধুতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। তবে উপকারীতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা আছে। এখন আমরা জানবো মধুর অপকারিতা সম্পর্কে।
যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের মধু খাওয়া ঠিক নয়। কারণ মধুতে এলার্জি বাড়তে পারে। এলার্জি অবস্থায় মধু খেলে শ্বাসকষ্ট, গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, ঠোঁট ফুলে যাওয়া্ এবং গলা ব্যাথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মধু খাওয়া ঠিক নয়
এই বিষয়ে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও কিছুকিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মধু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যান্য অপকারিতা
মধু খাওয়ার ফলে অনেকের ডায়রিয়া,সারাদিন ঘুম-ঘুম ভাব, হার্ট বিটের সমস্যা, চোখে আবছাভাব, ক্লান্তিভাব, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে মধু অনেক সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
এছাড়াও মধুতে কিছুটা ধূলিকণা থাকে যা ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর বহন করতে পারে। এটা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে তারা খুব সহজে অসুস্থ হয়ে যায়।
পরিশেষে, মধুর কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিন্তু মধুর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশী। মধুতে শর্করার ঘনত্ব এতো বেশি যে এতে কোনো জীবাণু ১ ঘন্টার বেশি বাঁচতে না।
মধুতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। সুস্থ হোক বা অসুস্থ সবাই মধু খেতে পারেন।কারণ মধু একটি নির্ভে্জাল ভেষজ উপাদান