Bangla courses
February 21, 2023

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মধু আল্লাহর দেওয়া প্রদত্ত নেয়ামত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান। মধু হলো এক প্রকার ঘন ও মিষ্টি তরল পদার্থ। মধু হলো হাজার হাজার মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের নির্যাস সংগ্রহ করে তাদের পাকস্থলিতে রাখে।

এরপর তাদের মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মধু তৈরি হয়। এরপর সেই মধু তারা মৌচাকে আহরণ করে রাখে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণসম্পন্ন  একটি তরল পদার্থ।

পবিত্র কোরআনে মধু

আরবিতে মৌমাছিকে বলা হয় নাহল(আরবি: سورة النحل‎‎)। পবিত্র কোরআনে এই নামে একটি সূরা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘’তার পেট থেকে বিভিন্ন রংয়ের পানীয় নির্গত হয়।যাতে মানুষের জন্য রয়েছে প্রতিকার ‘’(সূরা নাহল,৬৯)

মধু হচ্ছে খাদ্য এবং ঔষধ উভয়ই। আল্লাহ তায়ালা আরও  বলেন,” জান্নাতে স্বচ্ছ পানির নহর প্রবাহিত হবে”(সূরা মুহাম্মদ,১৫)। মধুর আরেকটি বৈশিষ্ট হলো মধু নষ্ট হয় না এবং অন্য বস্তুকেও নষ্ট হতে দেয় না।

মধুর রোগ সারানোর শক্তি অনেক বেশি। কিছু কিছু চিকিৎসক আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে মধু সর্ব রোগের ঔষধ। তারা ফোঁড় থেকে শুরু করে চেখের চিকিৎসায়ও মধু ব্যবহার করেন।

হযরত ওমর(রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে তিনি তার শরীরে ফোঁড়া হলেও মধু ব্যবহার করতেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন. ”আল্লাহ তায়ালা কি কোরআনে বলেননি যে, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার”।(কুরতুবী)

হাদিস শরীফে মধু

হাদিস শরীফে মধু সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সাঃ) এর মতে- মধু হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয়।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন যে,রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সকালে

মধু চেটে খায় তার কোন বড় বিপদ হতে পারে না।”(ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)

স্বয়ং, রাসূলুল্লাহ (সা.) সকাল বেলা খালি পেটে মধুর শরবত পান করতেন।

মধুর উপকারিতাঃ

মধুর পুস্টিগুণ

মধু ৪৫ টিরও বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ

১. গ্লুক্লোজ

২. ফ্রুক্টোজ

৩. সুক্রোজ

৪. মল্টোজ

৫. খনিজ লবণ 

৬. ভিটামিন বি ১

৭.  ভিটামিন বি ২

৮. ভিটামিন বি ৩

৯.  ভিটামিন বি ৫

১০.  ভিটামিন বি ৬

১১. আ্যমাইনো এসিড

১২. এনকাইম

১৩. আয়োডিন

১৪. আ্যন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান

১৫. আ্যন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান

১৬. জিংক

১৭. কপার

রোগ নিরাময়ে মধু

মধু ভেষজ উপাদানের সাথে মিশিয়ে রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে কয়েকটি রোগ নিরাময়ে মধুর ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ

সর্দি কাশি

চায়ের সাথে মধু ও আদার রস খেলে সর্দি ও শ্লেষ্মা দূর হয়।

খাওয়ার নিয়মঃ- মধু চামচ+ আদার রস চা চামচ

  • ২ চা চামচ মধু সাথে বাসক পাতার রস একসাথে খেলে সর্দি কাশি সেরে যায়।
  • ১ চা চামচ তুলসি পাতার রস সাথে সমপরিমাণ মধু খেলে অল্প সময়ে কাশি দূর হয়।
  • ২ চা চামচ মধু ১ গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে সর্দিকাশি দূর হয়।
  • ১ চা চামচ আদার রস এবং ১ চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধ্যা বেলা খেলে সর্দি সেরে যায় ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।

স্বরভঙ্গ

খাঁটি মধুর সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে গড়গড়া করলে গায়কদের স্বর বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে এটা টনিকের মতো কাজ করে।

আমাশয়ের চিকিৎসায় মধু

রক্ত মিশ্রিত পায়খানা, তৈলাক্ত পায়খানা এবং সঙ্গে পেট কামড়ালে তাকে আমাশয় বলে মধু দিয়ে কিভাবে আমাশয় রোগের  চিকিৎসা করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • কচি বেল ও আমগাছের কচি বাকল বেঁটে তার সঙ্গে গুড় ও মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।
  • বড়ই গাছের ছাল চূর্ণের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।
  • ৫০০ গ্রাম আতপ চাল ভেজে গুঁড়ো করে তার সঙ্গে ১২৫ গ্রাম ঘি, ২৫০ গ্রাম খাটি মধু, ১২৫ গ্রাম চিনি এবং ২০টি কলা ভালোভাবে মিশিয়ে খাবার উপযোগী করে ৩/৪ দিন নিয়মিত খেলে সব ধরনের আমাশয় ভালো হয়ে যায়।

ডায়রিয়ার চিকিৎসায় মধু

ডায়রিয়া হলে রাসুল(সঃ) মধু খাওয়ানোর কথা বলেছেন।

  • ডায়রিয়া হলে দারুচিনি গুঁড়া ও খয়ের  সমপরিমাণ নিয়ে এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
  • আমাশয় ও পাতলা পায়খানা থাকলে গরম পানিতে আড়াই চা-চামচ মধু মিলিয়ে শরবত বানিয়ে বারবার ‘সেবন করতে হবে’।

অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় মধু

  • মোটা হচ্ছেন তাদের মেদ কমানোর জন্য মধুর সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • দুর্বল শিশুকে ১ ফোঁটা মধু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ বার খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ভালো হয়।
  • শিশুদের দৈহিক গড়ন, রুচি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও পেট ভালো রাখার জন্য প্রত্যেকদিন ১ চা চামচ মধু, গরম দুধ ও গরম পানির সঙ্গে নাশতা এবং রাতের খাবারের সঙ্গেও এটা দিতে হবে।
  • চক্ষু রোগে ১ ফোঁটা করে মধু দিনে ৩ বার চোখে লাগাতে হবে
  • পিপুল ও গোল মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে কিছু দিন নিয়মিত খেলে পুরাতন উদরাময় ভালো হয়ে যায়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এক গ্লাস গরম দুধ বা গরম পানিতে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে কয়েকবার খেলে উপকার পাওয়া যায়। 
  • শরীরের বাইরের কোনো অংশের ক্ষতের জন্য মধুর প্রলেপ লাগালে অনেক সময় মলমের চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • পানিতে অল্প মধু মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর ক্ষত সারে।
  • মৌরির পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে দূষিত বায়ু পেট থেকে বেরিয়ে যায়।
  • ১ কাপ দুধে ১  চা চামচ মধু মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
  • যক্ষ্মা রোগে বাসক পাতার রস ১  চা-চামচ পরিমাণ, ১ চা-চামচ মধু এবং ১ চা-চামচ আদার রস মিশিয়ে কিছু দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পেঁয়াজের রস, ২৫০ গ্রাম ঘি এবং ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকাল খেলে এবং প্রতি রাতে শোয়ার সময় চিনি দিয়ে অল্প পরিমাণ গরম দুধ খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে যক্ষ্মা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘’মধু হৃদপিন্ডকে সতেজ করে। প্রতিদিন হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ মধু নিয়ে চেটে খেলে হৃদরোগ থাকে না।‘’

জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ই কচ বলেছেন, "উপযুক্ত পরিমাণ ঘাস খেলে ঘোড়া যেমন তেজী হয় তেমনি নিয়মিত সকালে ১ চা চামচ করে খাঁটি মধু খেলে হৃদপিন্ড শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া মধু আয়ুও বৃদ্ধি করে।"

মধু খেলে আমরা কি ধরনের উপকার পাবো

মধু শুধু রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় না। এর আরো উপকারিতা আছে। এখন আমরা সেগুলো জানবোঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • যৌন দুর্বলতা কমায়
  • রক্তশূন্যতা দূর করে
  • হজমের সমস্যা দূর করে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করে 
  • হার্ট আ্যাটাকের ঝুকি কমায়
  • পাকস্থলীর ক্ষত সারে
  • শরীরে শক্তি জোগায়
  • ত্বকের উপকার করে
  • শরীর ও লিভার পরিষ্কার করে

মধুর অপকারিতা

মধুতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। তবে উপকারীতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা আছে। এখন আমরা জানবো মধুর অপকারিতা সম্পর্কে।

যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের মধু খাওয়া ঠিক নয়। কারণ মধুতে এলার্জি বাড়তে পারে। এলার্জি অবস্থায় মধু খেলে শ্বাসকষ্ট, গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, ঠোঁট ফুলে যাওয়া্ এবং গলা ব্যাথা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় মধু খাওয়া ঠিক নয়

এই বিষয়ে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও কিছুকিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মধু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অন্যান্য অপকারিতা

মধু খাওয়ার ফলে অনেকের ডায়রিয়া,সারাদিন ঘুম-ঘুম ভাব, হার্ট বিটের সমস্যা, চোখে আবছাভাব, ক্লান্তিভাব, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে মধু অনেক সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও মধুতে কিছুটা ধূলিকণা থাকে যা ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর বহন করতে পারে। এটা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে তারা খুব সহজে অসুস্থ হয়ে যায়।

পরিশেষে, মধুর কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিন্তু মধুর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশী। মধুতে শর্করার ঘনত্ব এতো বেশি যে এতে কোনো জীবাণু ১ ঘন্টার বেশি বাঁচতে না।

মধুতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। সুস্থ হোক বা অসুস্থ সবাই মধু খেতে পারেন।কারণ মধু একটি নির্ভে্জাল ভেষজ উপাদান

আরও পড়ুন

March 1, 2025
Top 10 Dermatologists Doctors in Dhaka for Your Skin Health
The skin is the human body's largest organ, which not only protects it from infection…
February 25, 2025
সয়াবিন তেলের বর্তমান বাজার মূল্য
সয়াবিন তেল বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য উপাদান, যা দৈনন্দিন রান্নার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।…
December 19, 2024
শীতে ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস
শীতকালের আগমনের সাথে সাথে ত্বকের যত্নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া ত্বককে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram
Share via
Copy link