প্রসেসর ( Central processing unit or CU) , একটি ইলেকট্রনিক সার্কীটরি যা কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্দেশাবলী কার্যকর করে। অর্থাৎ, এটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের দ্বারা নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী সাড়া দেয় এবং প্রক্রিয়া করে।
প্রসেসরের প্রধান কাজগুলো হল - মৌলিক গাণিতিক, লজিক , নিয়ন্ত্রণ এবং ইনপুট/আউটপুট (I/O) অপারেশন। শুধু তাই নয়, CPU বেশিরভাগ গাণিতিক, লজিকাল এবং আমাদের দেয়া ইনপুট বা নির্দেশাবলি সম্পাদন করা।
বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার-সহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবহার করে থাকি। আর এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মগজ বা ব্রেন হলো প্রসেসর।
আমরা যেমন আমাদের ব্রেনের নির্দেশণা অনুযায়ী কাজকর্ম করে থাকি। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন সহ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলোও ঠিক তেমনি প্রসেসরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। আর এই জন্য CPU কে কম্পিউটারের প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টিগ্রেটেড সার্কীটরি (IC) চিপ হিসাবে দেখা হয়।
তাহলে চলুন এবার এই প্রসেসর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আজকে আমরা যে বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, তা হলোঃ
১৯৬০ এর দশকের ঠিক শেষের দিকে এবং ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে এই প্রসেসরের সফল উৎপাদন শুরু হয়। এবং ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে পৃথিবীর সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর Intel 4004 বাজারে আসে। এর পর থেকে আর এই প্রসেসরকে পিছু ফিরতে হয়নি। সময়ের পরিবর্তনে প্রসেসরের মধ্যেও নিয়ে আশা হয়েছে পরিবর্তন আর আধুনিকতার ছোয়া।
ঐ সময়ে প্রসেসরের ডেটা প্রসেসিং সক্ষমতা ছিল মাত্র কয়েক হাজার, কীন্তু বর্তমানে তা কয়েক হাজার কোটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার ফলসরূপ আমরা দ্রুত গতির কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বুলেট ট্রেন, গাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারছি।
প্রসেসর, যা CPU নামেও পরিচিত, কম্পিউটারকে তার কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী এবং প্রক্রিয়াকরণ শক্তি প্রদান করে। আপনার প্রসেসর যত বেশি শক্তিশালী এবং আপডেট হবে, আপনার কম্পিউটার তত দ্রুত তার কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে পারবে।
প্রথম CPU আসার পর থেকে কয়েক বছর ধরে অনেক উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও, CPU-এর কাজ করার প্রক্রিয়া একই রয়ে গেছে যা মধ্যে তিনটি ধাপ হয়ঃ
- Fetch (ইন্সট্রাকশন গ্রহন করা)
- Decode (ডিকোড) এবং
- Execute ( সম্পাদন করা)
কেন্দ্রীয় প্রসেসিং ইউনিট (CPU) ছয়টি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত:
কন্ট্রোল ইউনিট ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস, গাণিতিক এবং লজিক ইউনিট এবং কম্পিউটারের মেমরি সিপিইউতে প্রেরিত নির্দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ইনপুটটি নিয়ে আসে, এটিকে একটি ডিকোডেড আকারে রূপান্তর করে। এবং তারপরে এটি কম্পিউটারের প্রসেসরে প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঠায়, যেখানে পছন্দসই অপারেশন করা হয়। দুই ধরনের কন্ট্রোল ইউনিট রয়েছে - হার্ডওয়্যার কন্ট্রোল ইউনিট এবং মাইক্রোপ্রোগ্রামেবল কন্ট্রোল ইউনিট।
কন্ট্রোল ইউনিটের কাজ:
প্রসেসরে এই অংশের কাজ হলো ডেটাকে বিভিন্নভাবে গাণিতিক ক্যালকুলেশন করা,
যেমন ধরুণ যোগ, বিয়োগ, গুণ,ভাগ, X-OR, OR,AND ইত্যাদি।
যদি এক কথায় বলতে হয়, তাহলে বলা যায়, যে প্রসেসরে (Arithmetic and Logic Unit) গাণিতিক যুক্তি অংশের কাজ হলো ডেটাকে বিশ্লেষণ করা।
প্রসেসরের এই অংশটি আবার তিনটি কমান্ডকে অনুশরোন করে কাজ করে। তা হলোঃ-
প্রসেসরে এই অংশের কাজ হলো, ডিভাইসটিকে কমান্ড দেওয়া, অর্থাৎ একটা ডিভাইস প্রথমে কোন কাজটা করবে তারপর কোন কাজটা করবে এভাবে তাকে নির্দেশ দেওয়া।
যখন কোনো ডেটা মোবাইলে অথবা কম্পিউটার বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রে ইনপুট করা হয় তখন সেই ডেটা গুলো সেই ডিভাইসের RAM ( Random Access Memory) এ গিয়ে জমা হয়।
তারপর এই Timing & Control Unit বা সময় নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ অংশটি ডেটা গুলোকে Arithmetic and Logic Unit গাণিতিক যুক্তি অংশে প্রেরণ করে বিশ্লেষণের জন্য। বিশ্লেষণের পর প্রাপ্ত ফলাফলকে আবার পূণরায় RAM এ জমা প্রদান করাই হলো প্রসেসরে Timing & Control Unit বা সময় নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ অংশের কাজ। এর পাশাপাশি এটি প্রাপ্ত ফলাফলকে ডিসপ্লেতে প্রদশণের কাজও সম্পাদণ করে থাকে।
এটি হলো খুবই সল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী ভাবে ডেটা ধারণ করার মেমোরি বা স্মৃতি। কম্পিউটার বা মোবাইল যেটাই হোক না কেনো এটিতে কোনো কাজ করতে হলে তার জন্য মেমোরি বা স্মৃতির প্রয়োজন হয়।
কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইস গুলো যখন কাজ করে তখন বিশ্লেষিত ডেটা বা তথ্য গুলো এসে সেই কম্পিউটার বা মোবাইলের প্রসেসরের স্মৃতিতে এসে জমা হয়। আর এই Resister Array & Memory Unit রেজিস্টার এ্যারে ও সৃতি অংশই হলো সেই অস্থায়ী মেমোরি বা স্মৃতি।
তাহলে আমরা এবার জানতে পারলাম যে ডিভাইসে ইনপুট কৃত ডেটাকে প্রথমে Arithmetic and Logic Unit বা গাণিতিক যুক্তি অংশ দিয়ে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত পৌছানো তারপর সেই ডেটাকে Resister Array & Memory Unit বা রেজিস্টার এ্যারে ও সৃতি অংশে অস্থায়ী ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ ও এই সম্পূর্ণ কার্যবলীকে Timing & Control Unit বা সময় নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ অংশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে প্রসেসিং করার মাধ্যমে একটি প্রসেসর তার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।
ক্যাশ হল এক ধরনের র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি যা অস্থায়ীভাবে অল্প পরিমাণ ডেটা এবং নির্দেশনা সঞ্চয় করে যা প্রয়োজন হলে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি RAM থেকে আনার পরিবর্তে নির্দেশগুলো আনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের পরিমাণ হ্রাস করে, এটি অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাশে থেকে সরাসরি অ্যাক্সেস করা যেতে পারে।
ক্যাশের কাজ:
আমরা সাধারণ ভাবে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত যেসব প্রসেসর গুলোর সাথে পরিচিত তা হলো Core i 7, Core i 5 ও Core i 3 ইত্যাদি।
তবে এগুলোতেই কীন্তু প্রসেসরের শেষ নয়। কারণ এগুলোর বাইরেও আরো অনেক অনেক প্রসেসর রয়েছে এবং যে গুলো ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে উন্নত হয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসে পৌছেছে।
তাহলে চলুন এবার কিছু ব্যতিক্রমধর্মী প্রসেসরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যে দুটি প্রসেসর উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের একটি হলো ইন্টেল ( Intel) এবং অপরটি হলো এএমডি (AMD)। চলুন আমরা এবার (Intel) ইন্টেল কম্পানির তৈরি কিছু প্রসেসরের সাথে পরিচিত হই।
Intel বা ইন্টেলের তৈরি কিছু প্রসেসরঃ-
উপরে আমরা Intel কম্পানির দ্বারা তৈরি কিছু প্রসেসরের সাথে পরিচিত হলাম। এখানে প্রায় প্রসেসরের নামের আগে কোর (Core) দেওয়া, এবার এখান থেকে আপনাদের একটা প্রশ্ন মনে জাগতে পারে যে, এই কোর (Core) গুলোর আবার মানে কী?
তাই না? তাহলে চলুন এবার সেই বিষয় অর্থাৎ কোর(Core) বিষয় কিছু জেনে নিই।
প্রসেসরের কোর হলো প্রসেসরের ডেটা প্রসেসিং ইউনিট। অর্থাৎ একটা প্রসেসর কী পরিমাণ ডেটা প্রসেসিং করতে পারবে তার ইউনিট।
যেমন ধরুণ ৩ কোরের একটি প্রসেসরে ডেটা প্রসেসিং ইউনিট হলো ৩ টি। এভাবে ৫ কোরের প্রসেসরে ডেটা প্রসেসিং ইউনিট ৫ টি, ৭ কোরের প্রসেসরের প্রসেসিং ইউনিট ৭টি ইত্যাদি। আবার যে প্রসেসরে কোরের সংখ্যা অর্থাৎ ইউনিটের সখ্যা যত বেশি, সেই প্রসেসরের কার্যক্ষমতাও ঠিক তত বেশি। সুতরাং এই কোরের সংখ্যা হলো প্রসেসরের কার্যক্ষমতা নির্দেশক একটি সংখ্যা। তার মানে আমরা বুঝি Core(কোর) হলো প্রসেসরের কার্যক্ষমতা বেশি বাড়ানোর ধাপ।
এবার তাহলে চলুন জেনে নেয়া জাক প্রসেসরের ক্লক স্পীড সম্পর্কে।
প্রসেসরের (clock speed) ক্লক স্পীডের দ্বারা বুঝানো হয়,একটি প্রসেসর ঠিক কত দ্রুত ডেটাকে প্রেক্রিয়াকরণ করতে পারে তার সময়কে।
যেমন ধরুণ একটি প্রসেসরের ক্লক স্পীড 3GHz to 5GHz অর্থাৎ প্রসেসরটি প্রতি সেকেন্ডে সর্বনিম্ন ৩ তিন গিগাহার্জ থেকে সর্বোচ্চ ৫ গিগাহার্জ ডেটা একত্রে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। আর এটিই হলো প্রসেসরের ক্লক রেট যাকে প্রসেসরে (Clock speed) বলা হয়।
আশাকরি যারা এই আর্টিকেলটি পড়েছেন তাদের সকলের কাছেই এই প্রসেসর, এর উৎপত্তি, এর কার্যপরিধি ও প্রক্রিয়ার সম্পর্কে মোটামুটি কিছু হলেও বুঝতে ও জানতে পেরেছেন। আর,আপনাদের এই জানাতে পারার মধ্যেই আমার সার্থকতা।
এটি মাদারবোর্ড নামক সার্কীটের একটি বড় অংশে অবস্থিত। মাদারবোর্ডে CPU সঠিক অবস্থান ফর্ম ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। যাইহোক, এটি প্রায়শই RAM স্লটের পাশে পাওয়া যায়।
AMD এর 64-কোর, 128টি থ্রেড সহ, Ryzen ThreadRipper 3990X ডেস্কটপ পিসি প্রসেসরকে 2021 সালে বিশ্বের দ্রুততম CPU হিসাবে বিবেচনা করা হয়। CPU-তে একটি 2.9 GHz বেস ক্লক এবং একটি 4.3 GHz ম্যাক্স বুস্ট ক্লক রয়েছে যা মাল্টিটাস্কীং এবং দ্রুত লোড করার সুবিধা দেয়।
কম্পিউটার চিপস এবং প্রসেসরগুলিতে তিনটি উপাদান রয়েছে যা তাদের ডিজাইনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবদান রাখে - সিলিকন, প্লাস্টিক এবং তামা। সিলিকন ডাই অক্সাইড সিলিকা বালি বা কোয়ার্টজ থেকে আসে।
স্মার্টফোনের প্রসেসর হল সেই উপাদান যা আপনার সমস্ত ক্রিয়াকে স্ক্রিনে ভিজ্যুয়াল পরিবর্তনে রূপান্তরিত করে। এটি কোরের সংখ্যা এবং একটি নির্দিষ্ট ক্লক স্পীড জন্য এটি করতে পারে। কোরের সংখ্যা নিশ্চিত করে যে ক্রিয়াগুলি সর্বদা সময়মত প্রক্রিয়া করা হয়।