ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আমাদের প্রশ্নের শেষ নেই। আমরা অনেকেই জানিনা ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কাকে বলে।
এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করবো ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আপনাদের একটি ক্লিয়ার ধারণা দেওয়ার জন্য।
আমি এই আর্টিকেলটি এমনভাবে সাজিয়েছি যাতে করে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর সম্পর্কে বিস্তারিত যেমন এটি আসলে কি? কি কাজে লাগে? কত প্রকার এদের মধ্যে পার্থক্যটা কি? কিভাবে বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায় এবং এটার লাভ কি হতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং হল অনলাইনে কোন পণ্য বা পরিষেবা প্রমোট করার প্রক্রিয়া। এজন্য ডিজিটাল মার্কেটিং -কে অনেক সময় অনলাইন মার্কেটিং এ বলা হয়।
অফলাইন বা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পার্থক্য হল এই মার্কেটিং করা হয় ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করে, যেমন ওয়েবসাইট, ডিজিটাল কন্টেন্ট ইত্যাদি।
তাহলে আমরা এতটুকু বুঝতে পারলাম যে ডিজিটাল মার্কেটিং হল অফলাইন মার্কেটিং এর ডিজিটাল ফর্ম।
মজার ব্যাপার হলো আমরা যদি অফলাইন মার্কেটিংকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং বুঝতে চাই তাহলে আমাদের জন্য এটা কষ্টকর হয়ে যায়।
কেননা নতুন হিসেবে আমাদের অনেকেরই ডিজিটাল চ্যানেলগুলো সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকে না। আবার মার্কেটিং এর ব্যসিকগুলো দুটি ক্ষেত্রেই এক।
যেমন, দুটি পদ্ধতিতেই সম্ভাব্য ক্রেতা ঠিক করতে হয়, পন্যের গুনাগুন, বাজার বিশ্লেষণ সহ ইত্যাদি করতে হয়।
এই কন্টেন্টটিতে আমি ডিজিটাল মার্কেটিং বোঝাতে অফলাইন মার্কেটিং এর বিভিন্ন উদাহরণ দিয়েছি কারণ এতে করে আমার মতে আপনাদের বুঝতে সাহায্য হবে।
আসুন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানি।
ডিজিটাল মার্কেটিংকে অনেকভাবে বিভক্ত করা যেতে পারে তবে আমরা বোঝার সুবিধার্থে ডিজিটাল মার্কেটিং- কে দুটি ভাগে ভাগ করব। কেননা এতে করে আমাদের বুঝতে সহজ হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিংকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে
ইনবাউণ্ড মার্কেটিং টা হলো এমন মাধ্যম যেখানে আপনার কাছে গ্রাহক আসবে।
আমরা যদি অফলাইনের উদাহরণ দেই তাহলে ধরুন আপনি একটি চায়ের দোকান দিলেন যেখানে মানুষজন চা খেতে বা আড্ডা দিতে আসে। অর্থাৎ, এখানে মানুষজন চা খেতে আসে সুতরাং আপনার চায়ের দোকানে বিক্রি হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়।
অনলাইনের ক্ষেত্রে, ধরুন আপনি চা পাতা বিক্রি করেন, যেখানে আপনি একটু ওয়েবসাইট করলেন এবং সেটিকে সার্চ ইঞ্জিনে ১ নম্বর পজিশনে র্যাংক করালেন। অর্থাৎ মানুষ যখন চা পাতা কিনতে অনলাইনে সার্চ দিবে তখন আপনার ওয়েবসাইটটি পাবে এবং সেখান থেকে আপনার পণ্য কেনার সুযোগ তৈরি হবে।
এই মার্কেটিং করার প্রক্রিয়াগুলো হল
আউট বাউন্ড মার্কেটিং হল গ্রাহকের কাছে আপনার পণ্যের বা পরিষেবার প্রমোশন চালানোর প্রক্রিয়া।
অফলাইনের ক্ষেত্রে যেমন, দেয়ালে দেয়ালে বিজ্ঞাপন বা লিফলেট চাপিয়ে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া।
এবার ডিজিটালি বললে, দ্রুত বিক্রয়ের আপনি আপনার বিপণনের দর্শকদের কাছে প্রমোট করার প্রক্রিয়াটা আউট- বাউন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। একটি কৌশলে উদ্যোক্তা বা বিক্রেতা তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলোকে ভোক্তাদের কাছে প্রচার করতে ব্যবহার করে।
ধরুন আপনি চা পাতা অনলাইনে বিক্রি করেন, সুতরাং আপনি ডিজিটাল এড ব্যবহার করলেন, এবং ওইসব কাস্টমারের সামনে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলেন যারা হচ্ছে চা পাতা বা সম্পর্কে আগ্রহী।
আউট বাউন্ড মার্কেটিং এর জনপ্রিয় ডিজিটাল প্রক্রিয়াগুলো হল
নিচে যেসব উপায়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয় সেটা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
২০০০ সালের আগে, মার্কেটিং সাধারণত প্রিন্ট (সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন) এবং ব্রডকাস্ট বিজ্ঞাপন (টিভি এবং রেডিও) এর মাধ্যমে করা হত। এই চ্যানেলগুলি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা মানুষজন এখন মোবাইল ডিভাইস এর সাথে বেশি সময় অতিবাহিত করছে। এবং তারা অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করছে।
আসুন জেনে নেই , ডিজিটাল মার্কেটিং করার নয়টি চ্যানেল সম্পর্কে।
ওয়েবসাইট সকল ডিজিটাল মার্কেটিং কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। এটি নিজেই একটি খুব শক্তিশালী চ্যানেল, এবং বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং প্রচারাভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাধ্যম। ওয়েবসাইটে একটি ব্র্যান্ড, পণ্য, এবং সেবা সম্পর্কে উপস্থাপন করা থাকে।
পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মার্কেটাররা পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পণ্য সম্পর্কে অবগত করাতে পারে। মার্কেটাররা গুগল, বিং, লিঙ্কডইন, টুইটার, পিন্টারেস্ট, এবং ফেসবুকে PPC প্রচারাভিযান সেট আপ করতে পারে এবং তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সর্বাধিক কার্যকরী দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) করা হয় যাতে সাইটের অর্গানিক সার্চ র্যাঙ্কিং পায়। যাতে কেউ সার্চ ইঞ্জিনে আপনার পণ্য সবার আগে খুঁজে পায়।
কনটেন্ট মার্কেটিং এর লক্ষ্য হল সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে মার্কেটিং করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কনটেন্টটি সাধারণত একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এবং তারপরে সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন, বা পে-পার-ক্লিক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কনটেন্ট মার্কেটিং এর মধ্যে ব্লগ, ইবুক, অনলাইন কোর্স, ইনফোগ্রাফিক, পড়্কাস্ট, এবং ওয়েবিনার রয়েছে।
ইমেল মার্কেটিং এখনও সবচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল গুলির একটি। অনেকেই ইমেল মার্কেটিং কে স্প্যাম ইমেল বার্তা সম্পর্কে ভুল ধারণা করে থাকেন। এই ধরণের মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি সম্ভাব্য গ্রাহকদের এবং তাদের ব্র্যান্ড এবং পণ্য নিয়ে আরও আগ্রহী কাউকে অবগত করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রচারাভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলি ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে লিড জেনারেশন এবং সরাসরি বিক্রয় চ্যানেল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল মার্কেটিং এর সবচেয়ে পুরানো ফর্ম, এবং ইন্টারনেট এটিকে নতুন জীবন দিয়েছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে, মার্কেটাররা অন্য লোকের পণ্য প্রচার করে এবং প্রতিবার বিক্রয় হলে বা লিড জেনারেট করলে কমিশন পায়।
YouTube বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলির একটি। অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কিছু শিখতে, জানতে , বা বিনোদনের জন্য ব্যবহার করে।মার্কেটাররা ফেসবুক ভিডিও, ইন্স্টাগ্রাম, এবং টিকটক, এইসব ভিডিও মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও মার্কেটিং প্রচারাভিযান চালাতে পারে।
পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে SMS এর ব্যবহার করা যায়। এটিও বেশ কার্যকরী উপায়, কেননা এতে করে তৎক্ষণাৎ গ্রাহকের কাছে কোন বার্তা পৌছানো যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বা ব্যবসা হিসেবে কেমন হবে - বিস্তারিত জানতে পড়ুন - ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কি ?