Bangla courses
April 9, 2023

ওযু করার নিয়ম ও অজু ভঙ্গের কারণ

মুসলমান হিসাবে, অজু আমাদের দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সঠিকভাবে অযু করা আমাদের শরীরকে পরিষ্কার করে এবং ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

তবে অযু করার সঠিক পদ্ধতি জানার পাশাপাশি তা ভঙ্গের কারণ জানা অপরিহার্য। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা অযু করার নিয়ম এবং তা ভঙ্গ করার কারণ নিয়ে আলোচনা করব।

ওজু বা অজু কি?

ওযু একটি আরবি শব্দ। ইসলামের বিধান অনুসরে অযু হলো দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধোয়ার মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার একটি পদ্ধতি। সর্বাবস্থায় পবিত্র থাকা বা কোনো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ওযুর নিয়ম অনুযায়ী পানি দ্বারা মুখমন্ডল, হাত পা ধোয়া এবং মাথা মাছেহ করাকে ওযু বলা হয়।

সাধারণত আমরা নামাজের জন্য ওযু করে থাকি কেননা নামাজের জন্য ওযু করা বাধ্যতামূলক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,”নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত:২২২)।

অযু সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন, “কেয়ামতের দিন আমার উম্মতগণকে এমন অবস্থায় পেশ করা হবে যে, তখন তাদের চেহারা দুনিয়ায় থাকিতে যে অযু করেছিল, তার বরকতে এমন ঝকমক করতে থাকবে – যেমন ঘোড়ার কপালে চাঁদ উজ্জ্বল দেখায়।”ওযু সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, “যারা ইমান এনেছ জেনে রেখো, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, তোমাদের দু হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে, মাথা মাছেহ্ করবে এবং উভয় পা টাখনু গিরাসহ ধুয়ে নেবে।” (সূরা আল মায়িদা – ০৬)

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের ওযুর ফরজ, ওযুর নিয়ম এবং ওযু ভঙ্গের কারণ জানা উচিত। আজকে আমরা ওযুর ফরজ, ওযুর নিয়ম এবং ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ওজু করার দোয়া

নামাজের (সালাহ) আগে অযু করা (ওজু) মুসলমানদের জন্য একটি অপরিহার্য অনুষ্ঠান কারণ এটি শরীর ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। অযু করার জন্য নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা এর বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওযুর নিয়ত: নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা’য়ালা।

ওজু করার দোয়া: বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম। ওয়াল হামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম। আল ইসলামু হাককুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন। আল ইসলামু নূরুন ওয়াল কুফরু জুলমাতুন।

ওযু করার নিয়ম

ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং এশার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ওযু করা হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ফরয সালাত আদায় করার আগে অবিলম্বে অযু করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি ঐচ্ছিক নামাজের আগেও করা হয়, যেমন রমজানে তারাবিহ নামাজ। অযুর সময়কে অবশ্যই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে যাতে এর কার্যকারিতা এবং ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়

  1. মনে মনে নিয়ত করে নিতে হবে করণ নিয়ত ছাড়া কোনো কাজই শুদ্ধ হয় না। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
  2. বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা কারণ  বিসমিল্লাহ না বললে ওযু হয় না।(আবু দাউদ, সুনান)
  3. তিনবার  ‍দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। হাতে ঘড়ি, চূড়ি, আংটি  প্রভৃতি থাকলে তা হিলিয়ে তলে পানি পৌছাতে হবে। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করতে হবে।(আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে ,মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত) ।এরপর পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে নেওয়া যেতে পারে।(বুখারী,মুসলিম)। উল্লেখ্য যে হাতে নখ পালিশ বা পুরু পেইন্ট থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত ওযু হবে না। কিন্তু মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় ওযু হয়ে যাবে।
  4. তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে।
  5. এরপর পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড় দিতে হবে। এভাবে তিনবার করতে হবে।তবে রোজা থাকা অবস্থায় পানি টানার সময় সাবধান হতে হবে যাতে পানি গলার নিচে চলে  না যায়। (আবূদাঊ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত )
  6. তারপর মুখমন্ডল পানি লাগিয়ে তিনবার দুইহাত দিয়ে ধুতে হবে।(বুখারী)দাড়ি ঘন থাকলে আঙ্গুল দিয়ে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে খিলাল করতে হবে।( আবু দাউদ, মিশকাত,সুনান)।মহিলাদের কপালে টিপ থাকলে তা ছড়িয়ে ফেলে কপাল ধুতে হবে। নাহলে ওযু হবে না।
  7. এরপর ডানহাতের আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত এপর  বাম হাত একইভাবে ধুতে হবে।
  8. অতঃপর মাথা মাছেহ করতে হবে। নতুন পানি দ্বারা দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুল গুলিকে মুখোমুখি করে, মাথার সামনের দিক(চুলের গোড়া থেকে) থেকে পিছনের দিক(গলার যেখানে চুল শেষ হয়েছে) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাছেহ করতে হবে।(আবু দাউদ, সুনান)
  9. এরপর নতুন পানি না নিয়ে ঐ হাতেই কান মাছেহ করতে হবে।( শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর দিক এবং বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা কানের বাহিরের দিক ও পিঠ মাছেহ করতে হবে।
  10. এরপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা ভালো করে ধুতে হবে। আঙ্গুল দ্বারা আঙ্গুলের ফাঁকাগুলো ভালো করে ধুতে হবে।(আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত)
  11. প্রিয় নবী(সাঃ)  বলেছেন, “পূর্ণাঙ্গরুপে ওযু কর, আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল কর আর রোযা না থাকলে নাকে খুব ভালকরে  পানি দাও। (তারপর তা ঝেড়ে ফেলে উত্তমরুপে নাক সাফ করুন) (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪০৫-৪০৬ নং)
  12. এরপর পানি নিয়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে লজ্জাস্থানে ছিটিয়ে দিতে হবে।বিশেষ করে প্রসাব করার পর ওযু করলে এই আমল অধিকরুপে ব্যবহার্য়। যেহেতু প্রসাব করার দু-এক ফোঁটা প্রসাব বের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।সুতরাং পানি ছিটালে এই আশঙ্কা দূর হয়ে যায়। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫২-১৫৪, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৩৭৪-৩৭৬নং)এই আমল স্বয়ং জিবরাইল আঃ মহানবী (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন।(ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান, মুস্তাদরাক হাকেম, বায়হাকী, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৮৪১নং)

ওযুর ফরজ কয়টি

ওযুর ফরজ ৪টি। এর যেকোনো একটি বাদ পড়লে ওযু হবে না। আর ওযু না হলে নামাজ হবে না।

ওযুর ফরজগুলো হলোঃ

  1. কপালে চুলের আগা হতে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং দুই পুশের কানের লতি পর্যন্ত পুরো মুখমন্ডল একবার ধোয়া।
  2. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধোয়া।
  3. মাথার চার ভাগের একভাগ মাছেহ করা।
  4. উভয় পা’’ টাখনু গিরাসহ একবার ধোয়া।

ওযুর সুন্নাতসমূহ

  1. ওজুর নিয়ত করা
  2. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে ওযু শুরু করা
  3. হাতের আঙ্গুলসমুহ খিলাল করা
  4. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিন বার ধোয়া।
  5. অজু শুরুতে বা আগে মিসওয়াক করা।
  6. তিনবার কুলি বা কুলকুচি করা।
  7. তিনবার নাকে পানি দেয়া
  8. তিনবার সম্পূর্ন মুখ মন্ডল ধোয়া।
  9. উভয় হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া
  10. সম্পূর্ণ- মাথা একবার মসেহ করা।
  11. টাখনু সহ উভয় পা তিনবার ধোয়া করা
  12. পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা
  13. এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা
  14. গর্দান মসেহ করা
  15. দুই কান মসেহ করা

ওযু ভঙ্গের কারণ

বিভিন্ন কারণে ওযু ভেঙে যেতে পারে। নিচে এর কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

  • পায়খানা বা প্রশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। প্রসাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে প্রসাব পায়খানা, কৃমি, বায়ু, মযি, মণি, মেয়েদের হায়েজ বা নিফাসের রক্ত বের হলে ওযু ভেঙে যায়। (আবু দাউদ ২০৬)
  • শরীরের যেকোন অঙ্গ থেকে নাপাকি বের হওয়া। শরীরের কোনো ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হলে, মুখ ভরে বমি করলে ওযু ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া বিন বায৩/২৯৪) 
  • গোসল ফরয হয়, এমন কিছু ঘটলে। যেসব কারণে গোসল ফরয হয় সেসব কারণে ওযুও ভেঙ্গে  যায়। যেমনঃ স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ ইত্যাদি।
  • শুয়ে, চিৎ হয়ে বা ঠেস দিয়ে ঘুমানো। শুয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমালে ওযু ভেঙ্গে যায়।
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। বেহুঁশ হয়ে গেলে বা মাতাল হয়ে যাওয়া বা কোন ঔষধ সেবনের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ওযু ভেঙ্গে যায়। (তিরমিযী: ৯৬; মুগনী- ১/২৩৪)
  • লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে। বিনা আবরণে হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করলে ওযু ভাঙবে না।
  • বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করল,  সে যেন আবার ওযূ করে নেয়।” (আবু দাউদ: ১৮১)
  • উম্মে হাবীবা (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে  লোক তার লিঙ্গ স্পর্শ করল,  সে যেন আবার ওযু করে নেয়।” (ইবনে মাজাহ: ৪৮১)
  • আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কোন নারী বা পুরুষ তার হাত দিয়ে কাপড়ের আবরণ ছাড়া সরাসরি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে আবার ওযু করতে হবে।” (ইবনে হিব্বান: ২১০) 
  •  উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভেঙে যায়।
  • নামাজের ভিতর উচ্চস্বরে হাসলে। ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত  রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অযু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।
  • হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অযু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’(সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)

শেষকথা

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত সর্বদা পাক পবিত্র থাকা। এজন্য আমরা ওযুর মাধ্যমে পাক পবিত্র থাকার চেষ্টা করব। আমার এই লেখার মাধ্যমে আমি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ওযুর ফরজসমুহ, ওযু করার নিয়ম এবং ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ নিয়ে।   

আরও পড়ুন

October 28, 2024
Why Apple Gift Cards Are Essential for Bangladeshi Consumers
The popularity of Apple products and services has surged in Bangladesh, particularly with the availability…
October 27, 2024
বাংলাদেশের সেরা ১০টি হেলথ কেয়ার স্টার্টআপ
এই আর্টিকেলেটিতে আমি বাংলাদেশের সেরা হেলথ কেয়ার স্টার্টআপগুলোর বিষয়ে বিস্তারত আলোচনা করেছি। সতেরো কোটিরও অধিক…
June 6, 2024
অর্থোপেডিক ডাক্তার কে? অর্থোপেডিক ডাক্তার কী করেন?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীরের প্রতিটি অংশের সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে হাড় ও জয়েন্ট। যখন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram
Share via
Copy link